যুব সম্প্রদায়ের জন্য সাতটি ধ্যান মন্ত্র
মানুষের জীবনের সমস্ত রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা সাধারণত ১৬ থেকে ২৫ - এই কয়েক বছরের মধ্যে হয়। তখন একান্ত প্রয়োজনীয় হল পরিস্হিতির ধরন ও মাত্রা বুঝে বাধা বিপত্তি অতিক্রম করতে শেখা। যা পছন্দ হয়, যা বলা হয়, যা করা হয় সব কিছু চিন্তার চেয়ে দ্রুতগতিতে হয়। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে এই অভিজ্ঞতার সঙ্গে আমাদের প্রথম সরাসরি পরিচয় হয়। আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা আমাদের ওপর সবচেয়ে বেশী প্রভাব ফেলে এবং তাদের কাছ থেকেই আমরা সবচেয়ে বেশী আনন্দ পাই। জীবনের এই পর্বে ধ্যান হল আমাদের সবচেয়ে ভাল ও শক্তিশালী বন্ধু।
(১) অমায়িক হও
“আমি ভীষণ আক্রমণাত্মক এবং ডানপিটে স্বভাবের ছিলাম, প্রায়্ই কলেজে মারপিট করতাম, আমার কোনো বন্ধু ছিল না।
নিজেকে কিভাবে সাহায্য করব সে বিষয়ে আমার কোন ধারণা ছিল না; ধ্যান করে আমি শান্ত হয়েছি। এখন আমার অনেক বন্ধু যাদের জন্য আমি ভাবি এবং আমার মধ্যে হিংসাত্মক, আক্রমণাত্মক মনোভাব আর নেই।”- রাজেশ নায়ার
প্রকৃতিগতভাবে প্রত্যেকে বন্ধুভাবাপন্ন হয়। যদি আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বপরায়ণতা না থাকে, তবে তার কারণ হল মানসিক চাপ। ধ্যান মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং আমাদের মধ্যে সুপ্ত সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে বিকশিত হতে সহায়তা করে। বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরী করা ও বজায় রাখা সহজ হয়ে যায়।
(২) তোমার স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত কর
“আমি গায়ক হতে চেয়েছিলাম; আমার উচ্চাকাঙ্খা ছিল কিন্তু নিজের সামর্থ্যের উপর সংশয় ছিল। নিয়মিত ধ্যান করার ফলে আমার আত্মবিশ্বাস জাগল যে আমি তা করতে পারি । আজ আমি একটা ব্যান্ডের সাথে যুক্ত, প্রায় প্রতি সপ্তাহে আমাদের অনুষ্ঠান থাকে।”- সজল জাজু
নবীন প্রজন্ম হিসাবে আমাদের স্বপ্ন আর লক্ষ্য আকাশ ছুঁতে চায়। ধ্যান আমাদের সেই শক্তি ও আত্মবিশ্বাসের অধিকারী করে যার দ্বারা আমরা স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হই।
(৩) গণ্ডীর বাইরে বেরিয়ে এসো
“নিয়মিত ধ্যান অভ্যাসের দ্বারা আমি নিজের মধ্যে নতুন প্রতিভা আবিষ্কার করেছি। আমার নিজের সৃজনশীল ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গন্ডীর বাইরে বেরিয়ে ভাবনা চিন্তা করতে পারি। এখন আমি যা কিছুই করি,ধ্যানের জন্য তাতে এক বিশেষ মাত্রা যোগ হয়।”- দিব্যা সচদেব।
যখন আমরা মোবাইল মার্টে যাই এমন কিছু পছন্দ করি যা সাধারণ চলতি মোবাইলের চেয়ে সবদিক থেকে আকর্ষণীয়। যখন আমরা ধ্যান করি, আমাদের সৃজনশীলতা জাগ্রত হয় এবং আমরা নতুন কিছু, আলাদা কিছু ভাবতে পারি আর সহজেই নিজের জন্য একটি যথাযোগ্য স্হান তৈরী করতে পারি।
(৪) কিছুই তোমায় নাড়া দিতে পারে না
“আগে আমি আমার জীবনে অপ্রীতিকর পরিস্হিতিতে ও অন্যের ব্যবহারে বিব্রত হয়ে পরতাম, কিন্তু নিয়মিত ধ্যান করে এখন আমার সামনে যাই আসুক, আমি সহজে মেনে নিতে পারি।”- করণ রায়।
যুবাবয়সে আমরা প্রায়ই অপ্রীতিকর পরিস্হিতির দ্বারা বিব্রত হই।এই ধরনের সমস্যায় কখনও কখনও আমরা ভীষণভাবে ভেঙ্গে পরি। ধ্যান আমাদের ভিতরে শক্তি আনে এবং মেনে নেবার ক্ষমতা জোগায় যা শান্ত মনে কঠিন পরিস্হিতির মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। আমাদের দায়িত্ববোধ অনেক বেড়ে যায় এবং উন্নততর একজন মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। আমরা বৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, কিন্তু সঙ্গে ছাতা থাকলে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারি। সমস্যাসঙ্কুল সময়ে ধ্যান ছাতার কাজ করে।
(৫) ধ্যানের সুখে ভাস
“আমি সাত বছর ধরে ‘চেইন স্মোকার’ ছিলাম। আমার এক বন্ধু ধ্যান শেখার পরামর্শ দেন।‘সহজ সমাধি ধ্যান’ নিয়মিত অভ্যাসের দ্বারা আমি সম্পূর্ণভাবে ধূমপান ছেড়ে দিতে পেরেছি। রোজ ধ্যানের পর আমার সেই সুখানুভূতি হয় যা আগে ধূমপান করার পর অনুভব করতাম।”- অরিজিৎ সিং
ধ্যান ধূমপানের স্হায়ী বিকল্প যা ধূমপান কমাতে এবং ছাড়তে সাহায্য করে। সজাগতা ও স্বাস্থ্য নষ্ট না করে প্রবল সুখানুভূতির এক স্বাভাবিক উপায় হল ধ্যান। ধূমপান, মদ্যপান বা অন্য কোনো নেশার অভ্যাস থেকে ধ্যান মনকে মুক্ত করে। অতএব ধূমপান বন্ধ কর এবং বাঁচা শুরু কর।
(৬) তোমার শক্তিকে একমুখী কর
“যখন থেকে আমি ধ্যান অভ্যাস করতে শুরু করেছি, সারাদিন ধরে অনেক বেশী উৎসাহ ও শক্তি পাই। আরো বেশী সৃজনশীল কাজ এবং কিছু সেবামূলক কাজও করতে পারছি।”- সাক্ষী বর্মা
যৌবনে আমরা শক্তি, উৎসাহ ও সৃজনশীলতার একটি সাগর।ধ্যানের দ্বারা আমরা নিজেদের শক্তিকে আবিষ্কার করি। আমরা আরও সক্রিয় হই।নতুন কিছু করার জন্য উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে উঠি এবং সৃষ্টিধর্মী ও ইতিবাচক কাজের দিকে আমাদের শক্তিকে একমুখী করে তুলতে সক্ষম হই।
(৭) বাবা মায়ের সাথে শান্তিপূর্ণ অবস্হান তৈরি কর
“ধ্যান আমাকে বাবা-মায়ের সাথে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক স্হাপনে সাহায্য করেছে, এখন আমরা নিজেদের মধ্যে সবরকম আনন্দ ও সমস্যা ভাগাভাগি করে নিতে পারি, একই সঙ্গে ধ্যান করার জন্য আমাদের সম্পর্ক এক বিশেষ মাত্রা পেয়েছে৷”- অভিষেক দাওয়ার
যখন ধ্যান করি তখন শান্ত হয়ে কুশলতার সঙ্গে আমরা আমাদের বাবা-মায়ের সাথে আদান-প্রদান করতে পারি, যার ফলে আমাদের মধ্যে দূরত্ব কমে যায়। ধ্যান আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশী সচেতন ও দক্ষ করে তোলে। যার ফলে নিজেদের ইচ্ছা ও বাবা-মায়ের উপদেশ - এই দুয়ের মধ্যে আমরা সামঞ্জস্য রেখে চলতে পারি।