Email:-bdgunman@gmail.com


শরীর ও মনের প্রশান্তিতে হঠযোগ


যোগাসন
শরীর ও মনের প্রশান্তিতে হঠযোগঃ
হঠযোগ প্রাচীন ভারতীয় একটি জ্ঞান। পাঁচ হাজার বছর কিংবা তারও আগে মানুষ এই জ্ঞান নিয়ে গবেষণা করেছে। এটি একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি যার মাধ্যমে মন ও শরীরের সমন্বয় সাধন হয়। হঠযোগ দ্বারা শরীর ও মনের মধ্যে সংযোগ স্থাপন হয় যা একজন ব্যক্তিকে আরও উচ্চতর আত্ম-উপলব্ধিতে নিয়ে যেতে পারে। এতে শরীর নিরোগ ও নমনীয় হয়, মন হয় প্রশান্ত।

পৃথিবীর সর্বোত্তম প্রাণময় সত্তার অধিকারী মানুষ চায় তার জীবত্কালের মধ্যে নিরোগ ও প্রফুল্ল মন নিয়ে বাঁচতে। শুধুমাত্র যোগ এর মাধ্যমেই প্রাকৃতিক উপায়ে অত্যন্ত যত্ন সহকারে সতর্কতা ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির দ্বারা নিরোগ দেহ ও প্রফুল্ল মনের অধিকারী হওয়া সম্ভব। শুধু তাই নয় হঠযোগ দ্বারা ইন্দ্রীয়কে সংযত করে আত্মার সুপ্ত শক্তিকে জাগ্রত করা যায়, যার সাহায্যে আমরা চিত্তের বিভিন্ন বৃত্তিতে রূপান্তরিত হওয়া বন্ধ করতে পারি। যোগ সাধনার জন্য দামি দামি খাবারের প্রয়োজন হয় না। আমরা সাধারণত যা খাই সেই খাদ্যকেই সুষম ও সুসামঞ্জস্য করে নিলেই যথেষ্ট।

হঠযোগ একটি বিশেষ পথ যা শরীরকে গঠন করে রোগমুক্ত ও দীর্ঘায়ু করে যেন শরীর যোগের নিত্য নতুন সম্পদ গ্রহণে সমর্থ হয় কারণ অসুস্থ শরীর যোগের কঠিন সাধনা গ্রহণ করতে পারবে না। বর্তমান গতিশীল বিশ্বে ব্যস্ত সময়ের মধ্য থেকে মাত্র এক ঘণ্টা বা তারও কম সময় বের করে ও খালি হাতে হঠযোগের কয়েকটি আসন সাথে প্রাণায়াম, মুদ্রা ও মেডিটেশন করে দৈহিক ও মানসিক শক্তির সামঞ্জস্য এবং সেই সাথে নিরোগ কর্মঠ দেহ নিয়ে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা সম্ভব। হঠযোগ আসনের উপকারিতা ঃ সর্বাংগাসন ও মত্সাসন অভ্যাসের মাধ্যমে এনডোক্রিন গ্রন্থিসমূহ যথা, থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থিগুলোকে রক্তস্নাত করে এদের এমনভাবে উজ্জিবিত করে যে, অন্য কোন ব্যায়াম তা করতে পারে না। জানু শিরাসন, অর্ধচন্দ্রাসন, মত্সান্দ্রাসন অভ্যাসের মাধ্যমে মেরুদণ্ডকে সামনে পেছনে ডানে বাঁয়ে বাঁকিয়ে বার্ধক্যকে জয় করা সম্ভব কারণ মেরুদণ্ডে যদি ঠিকমত রক্তসঞ্চালন না হয় তাহলে স্নায়ুগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে ও শরীর জরাগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি স্পন্ডেলাইটিস রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে না। রক্তের উচ্চ চাপ কমাতে শবাসন খুবই উপকারী একটি আসন।

যোগের প্রকারভেদ ঃ যোগের বিভিন্ন প্রকার ভেদ রয়েছে তার মধ্যে কিছু হলো রাজযোগ, হঠযোগ, কর্মযোগ, ভক্তিযোগ ইত্যাদি।  এগুলোর মধ্যে হঠযোগই বর্তমান সময়ের উপযোগী। ইয়োগার উদ্দেশ্য ঃ ইয়োগার প্রধান উদ্দেশ্য হলো আত্মার সন্ধান করে সেখানে পৌঁছানো। একমাত্র ইয়োগা এই রহস্যময় আত্মার ঠিকানায় পৌঁছাতে সাহায্য করে যার মাধ্যমে ব্যক্তি পায় শরীর ও মনের ঐক্যতা ও আত্মশুদ্ধির পথ। যখন শরীর ভাল থাকে না তখন বুঝতে হবে মনও ভাল নেই। এই যে ভারসাম্যহীনতা তাতে একে সংস্কৃতিতে বলে Chittavritti. ইয়োগা অনুশীলন এই ভারসাম্যহীনতাকে দূর করতে সাহায্য করে।  আসনের মাধ্যমে শারীরিক অসুস্থতা ও অনবস্থা (আনস্টিডিনেস) দূর হয়ে যায়। এর মাধ্যমে আনইভেন রেসপিরেশন (অনিয়মিত শ্বসন) সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। বলা যায় যে, যোগাসনের মাধ্যমে হাড় শক্ত হয়, পেশী মজবুত হয়, ভঙ্গিমা ঠিক হয়, শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক গতি পায় এবং শক্তি বাড়ে। সেই সাথে মনও শান্ত হয়। আপনার জন্য ইয়োগা ঃ ইয়োগা সবাই করতে পারে। এর জন্য খুব অভিজ্ঞ হবার দরকার নেই। অথবা খুব কঠিন ইয়োগা আসন (পোজ) আয়ত্ত করারও দরকার নেই। আধুনিক জীবন ব্যবস্থায় আমরা যদি শরীরকে অবহেলা করি তবে অসুস্থতা, ব্যথা-বেদনা আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে বসবে। বেড়ে যাবে মানসিক চাপ কারণ শরীর ও মন একই সূত্রে গাঁথা। ইয়োগা এই সব মানসিক অস্থিরতা ও শারীরিক অসুস্থতাকে সারিয়ে তোলে। সেই সাথে ভেতর থেকে এক ধরনের শক্তি জাগিয়ে তোলে যা ভারসাম্য নিয়ে আসে এবং ভেতরের শক্তি দ্বারা মন শরীরের প্রতিটি কোষ আর ফাইবারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

কেউ কেউ শারীরিক গঠনের প্রতিই বেশি মনোযোগী হন। কিন্তু মন ও শরীর দুটোই গঠন করলে একটি শান্ত স্নিগ্ধ জীবনের অধিকারী হওয়া যায়।

ইয়োগা অনুশীলন এর পদ্ধতি জানাটা খুবই প্রয়োজন। একেকজনের শরীরের গঠন ও নমনীয়তা একেক রকম। তাই প্রথম অবস্থায় খুবই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। অন্যথায় আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং যোগ ব্যায়াম সম্পর্কে অনীহা কিংবা ভীতি চলে আসতে পারে।

n লেখক :যোগ শিক্ষিকা, ওয়াহিদ একাডেমি, ঢাকা